উড়িষ্যার পুরী রেলস্টেশনে ধর্মীয় পরিচয়ের জেরে দুই মুসলিম যুবককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে রেল পুলিশের এক কর্মীর বিরুদ্ধে।

ভগবানগোলা, মুর্শিদাবাদ, ১২ মে, সোমবার:- উড়িষ্যার পুরী রেলস্টেশনে ধর্মীয় পরিচয়ের জেরে দুই মুসলিম যুবককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে রেল পুলিশের এক কর্মীর বিরুদ্ধে। আক্রান্ত দুই যুবক—ভগবানগোলা থানার অন্তর্গত বাগডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা স্বপন সেখ ও আবু সাঈদ—ঘটনার পরে বাড়ি ফিরে এসে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁদের অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
ঘটনা ঘটে গত ৯ মে রাতে, যখন তারা পুরীতে শ্রমিকের কাজ করছিলেন এবং এক সহকর্মীকে বিদায় জানাতে পুরী রেলস্টেশনে গিয়েছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, স্টেশনে রেল পুলিশের এক সদস্য, যিনি ‘মিশ্রা জি’ নামে পরিচিত, তাদের ডেকে নাম জিজ্ঞাসা করেন। নাম বলার পরই ওই পুলিশ কর্মী তাদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে পেরে জাতি ও ধর্ম নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।
আরও অভিযোগ, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য তাদের জোর করে ‘জয় শ্রী রাম’ বলাতে বাধ্য করেন এবং মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-কে কটূক্তি করতে বলেন। এখানেই থেমে থাকেননি—তাদের দাবি অনুযায়ী, ওই পুলিশ কর্মী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কটূক্তি করতেও চাপ দেন। এইসব করতে অস্বীকার করায়, তাদের একটি প্রাইভেট স্থানে নিয়ে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। এমনকি হুমকি দিয়ে বলা হয়, “তোরা মাওবাদী, তোদের ছয় বছরের জেল খাটাবো।”
পরে তাদের কাজের মালিককে ফোন করিয়ে ডেকে আনা হয়। মালিক এসে পরিচয় নিশ্চিত করলে এবং বিষয়টি স্পষ্ট হলে, পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।
১১ মে সকালে স্বপন সেখ ও আবু সাঈদ বাড়ি ফিরে আসেন এবং ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সংবাদমাধ্যমকে জানান। তাঁরা বলেন, “ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, অথচ ধর্মের ভিত্তিতে এই ধরনের আচরণ দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে।” তাঁরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে খবর প্রকাশ্যে আসার পর, ভগবানগোলা DYFI (ডিওয়াইএফআই) সংগঠনের সদস্যরা বাগডাঙ্গা গ্রামে যান এবং আহত স্বপন ও সাঈদকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন। DYFI-র সম্পাদক মোঃ সাফিকুল ইসলাম এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তাঁরা জানান, এই ঘটনার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হবে এবং ন্যায়বিচারের জন্য তারা আন্দোলনে নামবেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে অপমান ও আক্রমণ করা ভারতীয় সংবিধানের মূল মূল্যবোধের পরিপন্থী। এটি দেশের অন্যতম বড় সামাজিক ব্যাধি হিসেবে উঠে আসছে, যা অবিলম্বে দমন করতে হবে।”
এই ঘটনায় রেল পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি।